০১। হযরত সৈয়দ আবু সাঈদ হায়দার শাহ্সাহেব বাবা হায়দারী (রা.) এর মাজার ও দরবার শরীফ -পাগাড় শাহ্সাহেব বাড়ী, টংগী
যুগে যুগে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অলি-আউলিয়া গাউস, কুতুব, আব্দাল, মোজাদ্দেদ, বুজুর্গ-সাধক ব্যক্তিগণ ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে আগমন করেছেন। তেমনি ঢাকার অদূরে টংগীর তুরাগ তীরে নিরিবিলি ছায়াঘেরা শান্ত একটি গ্রাম পাগাড়ে সম্ভাব্য ১৯৫০ সালে আগমন করে পূন্যভূমিতে রূপান্তর করেন মহান সাধক পুরুষ এ দেশে ইসলাম ও তরিকতের অন্যতম প্রচারক শাহ্সুফি সৈয়দ আবু সাঈদ হায়দার শাহ্সাহেব (রা.)। যিনি বাবা হায়দারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
পরিচিতিঃ মহানবী (সা.) এর বংশধর ইমাম হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের পর আহ্লে বাইতের সদস্য ইমাম জাইনুল আবেদীনের হাত ধরে এ বংশের সদস্য ও তাদের অনুসারীগণ মক্কা-মদীনার বাহিরে পাশ্ববর্তী অঞ্চল সমূহে ছড়িয়ে পড়তে থাকেন। নবীজি (সা) এর বংশে সৈয়দ জালালুদ্দিন সুরখ (রা.) উজবেকিস্তানের বুখারা শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। উনার বড় পুত্র সৈয়দ আলী হায়দার এবং তার পুত্র সৈয়দ আব্দুল হাদী ইবনে হায়দার। আলী হায়দার এর ধর্মযুদ্ধে শাহাদাতের পর উনার একমাত্র পুত্র কে দাদা জালালুদ্দিন সুরখ বুরসায় প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে জালালুদ্দিন সুরখ এর দৌহিত্র হযরত শাহ্জালাল মুর্শিদ আহ্মদ কবির (জালালুদ্দিন সুরখ এর কনিষ্ঠ পুত্র) এর নির্দেশে ভারতবর্ষে আগমনের পূর্বে উনার বড় মামার বংশধর সৈয়দ গাজী শোহেদা এবং সৈয়দ ফুল শোহেদা কে বঙ্গে গমনের দিকনির্দেশনা দেন। কিছুদিন পরে তারা বঙ্গে গমনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সৈয়দ গাজী শোহেদার বংশধর সৈয়দ বোরহান উদ্দিন (রা.) এর ঔরসে ১২৮০ বঙ্গাব্দের ১৬ই ফাল্গুন রবিবার সুবহে সাদিকের সময় জন্ম গ্রহন করেন সৈয়দ আবু সাঈদ হায়দার (রা.)। জানা যায় যে শৈশবের আচরণ থেকেই তিনি যে একজন সাধক পুরুষ হবেন তার আভাষ পাওয়া গিয়েছিল। তিনি স্থানীয় শিক্ষাঙ্গন থেকে কোরআন, হাদিস, ফিক্হ সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হতে ডাবল টাইটেল পাশ করেন। অতঃপর চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন পাশাপাশি ১২ টি ভাষাও আয়ত্ব করেন। অতঃপর আরবের বিভিন্ন দেশে পূর্বপুরুষদের মাজারসমূহ জিয়ারত করেন। দেশে ফিরে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হয়ে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন।
আধ্যাত্মিকতার পিপাসায় চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার শরীফের গাউসুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (রা.) এর বায়াত হন। উনার নির্দেশে ১২ বৎসর জৈন্তা পাহাড়ের নির্জন স্থানে সাধনা শেষে আধ্যাত্মিকতায় উৎকর্ষ সাধন করেন। স্বীয় মুর্শিদ হতে “হায়দার” লকবে ভূষিত হন। তথা হতে এই মহান সাধক গাউসে মোকার্রম কুৎবে দাওরান মোজাদ্দেদ জামান শাহ্সুফি সৈয়দ আবু সাঈদ হায়দার শাহ্সাহেব বাবা হায়দারী (রা.) নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করেন এবং মানবতার কল্যাণে ইল্মে তাসাউফের শিক্ষা প্রদান করেন। উনার অলৌকিক কর্মকান্ড ও চারিত্রিক মাধুর্যে গুণমুগ্ধ হয়ে অনেকেই শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি টংগীতে প্রতিষ্ঠা করেন পাগাড় শাহ্সাহেব বাড়ী হায়দারী দরবার শরীফ এবং The Haidery Spiritual Development and Psychical Research Society স্থাপন করেন। তিনি বিশ্ব মানবতার কল্যানার্থে প্রায় অর্ধশতাধিক কিতাব প্রণয়ন করেন এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে হায়দারী গাউসিয়া দায়রা শরীফ স্থাপন করে তাসাউফ চর্চার বিকাশ সাধন করেন। তিনি ১৩৭৫ বঙ্গাব্দের ১০ই মাঘ শুক্রবার আসরের নামাজের পর ইন্তেকাল করেন। এই পাগাড় গ্রামেই উনার রওজা শরীফ (সমাধি) অবস্থিত। প্রতিবছর বাংলা ১০ ই মাঘ ওরশ শরীফ উৎযাপিত হয়। সৈয়দ আবু সাঈদ হায়দার প্রকাশ বাবা হায়দারী (রা.) তরিকত সাধনায় কামিয়াবীর লক্ষ্যে এস্কে এলাহী, নবীপ্রেম আত্মশুদ্ধী, আত্মমুক্তির, তাসাউফের যেই শিক্ষা দিয়েছেন তা-ই তরিকায়ে হায়দারী। যেই তরিকা হযরত আলী (রা.) এর মাধ্যমে রাসূলে পাক (সা.) এর নির্দেশ মোতাবেক বেলায়েতের প্রথম তরিকা হিসেবে প্রকাশিত।
যাতায়াতঃ টংগী রেল ও বাস স্টেশন হতে পূর্ব দিকে যানবাহন যোগে পৌছান যায়।
০২। পাচ পীরের মাজার - দরগার চালা
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস